Saturday, November 9, 2019

ডেডিকেটেড ফ্যামিলি Vs কনজারভেটিভ ফ্যামিলি


লাইফের একটি রূঢ় বাস্তবতা হলো রক্ষণশীল পরিবারে জন্ম নেওয়া নম্র-ভদ্র সৃজনশীল ও স্বপ্নপ্রিয় সন্তানদের জীবনে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়; কারণ লাইফের দুঃসময়টাতে ফ্যামিলি তাদের পাশে থাকে না। তাই আগে থেকেই দুঃসময়ের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হয়। সেজন্য তরুণ বয়সেই (১৪-২০ বছর) একজন ছেলেকে তার ফ্যামিলি ডেডিকেটেড না কি কনজারভেটিভ তা জানা প্রয়োজন হয় এবং সেই মোতাবেক লাইফের পরিকল্পনা করতে হয়। এখন আমরা ডেডিকেটেড ফ্যামিলি এবং কনজারভেটিভ ফ্যামিলি এর প্রকৃতি বিশ্লেষণ করবো—

প্রথমে অল্প কথায় ডেডিকেটেড ফ্যামিলি সম্পর্কে ধারণা নেওয়া যাক—
ডেডিকেটেড ফ্যামিলি তার সন্তানের জন্য ডেডিকেটেড। সে তার সন্তানের জন্যই সবকিছুর পরিকল্পনা করে। সে তার সন্তানের দুঃসময়ে পাশে থাকে। দোষ করলে ভুল ধরিয়ে দেয় এবং সংশোধন হওয়ার পথ দেখিয়ে দেয়। লাইফে কোনো ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান করে তা সমাধানের পদক্ষেপ নেয় যাতে ভবিষ্যতে সেক্ষেত্রে আবারও ব্যর্থতা না আসে। সন্তানের বস্তুগত ও মানসিক প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করে। নিজের দৈনন্দিন জীবনে যেরূপ মানসিক পরিস্থিতিই আসুক না কেনো তার প্রভাব সন্তানের উপর পড়তে দেয় না। মোটকথা সন্তানকে রূপকথার গল্পের সেই নিজের প্রাণপাখির মতো করে রাখে।

এখন আমরা কনজারভেটিভ ফ্যামিলির বৈশিষ্ট্য ও প্রকৃতি সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করবো।
তুমি যদি কনজারভেটিভ ফ্যামিলির সন্তান হয়ে থাকো তাহলে তোমার সাথে নিম্নোক্ত ঘটনাগুলো ঘটবে:—
১. ঘটনা যাই ঘটুক তা তোমার দোষ হিসেবে মূল্যায়ন করা হবেঃ বিষয়টা একটু ক্লিয়ার করি। কোনো কাজে কেউ সফল না হওয়ার পেছনে নিজের দোষ কিংবা অদক্ষতা ছাড়াও আরও বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। কোনো দুর্ঘটনার কারণে কেউ কোনো কাজে ব্যর্থ হতে পারে। দুর্ভাগ্যের কারণেও কেউ কোনো কাজে ব্যর্থ হতে পারে, আবার সেই কাজ করতে গিয়ে কোনো প্রবলেম এর কারণেও সে সেই কাজে ব্যর্থ হতে পারে। আবার কোনো বিশেষ কারণেও সে সেই কাজে ব্যর্থ হতে পারে।
এক্ষেত্রে ন্যারো মাইন্ডের মূল্যায়ল হলো ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান না করে দুর্ঘটনা, দুর্ভাগ্য, প্রবলেম, বিশেষ কারণ যাহাই ঘটুক না কেনো সবকিছুকেই তার দোষ হিসেবে মূল্যায়ন করা।

একটা উদাহরণ দিই—
২০১১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়ে একটা পরীক্ষা দেওয়ার পর অসুস্থ হলাম ও সেদিন বিকেলে ঢাবির রেজাল্ট হওয়ার পর দেখা গেলো অল্পের জন্য মেরিট লিস্টে আসতে পারিনি। এতে আরও ভেঙে পড়লাম, কারণ আমার লাইফে বরাবরই এই সমস্যা আছে, কোনোকিছু কাছাকাছি গিয়ে অল্পের জন্য হয়না। যাহোক একটু সুস্থ হওয়ার পর পরদিন সকালে সেদিন বিকেলে অনুষ্ঠিতব্য পরীক্ষাটা না দিয়েই বাড়িতে রওয়ানা হলাম। সঙ্গে বাবা ছিলেন। বাবা বাসের জানালার পাশে ছিলেন আর আমি যাতায়াতের পথটার সঙ্গে লাগা সিটে ছিলাম।
গাড়িতে কিছু লোকাল যাত্রী তুলেছিল ও আমার কাছে একজন বৃদ্ধা দাঁড়িয়েছিল। এই সময়ের একটা মুহূর্তে আমি গভীর চিন্তায় চলে যাই, তখন আমার দেহটাই শুধু বাসের সিটে পড়ে ছিল, আমি চিন্তার জগতে ছিলাম। ঠিক সেই মুহূর্তেই বাসে হাইড্রোলিক ব্রেক চাপানো হয় ও সেই বৃদ্ধা ছিটকে পড়ে যেতে ধরে, যেহেতু আমি অপ্রকৃতস্থ অবস্থায় ছিলাম তাই আমি তাকে ধরতে পারিনি ও পাশে থাকা অন্য একজন ছেলে তাকে আটকায়।
তখন থেকেই আমার বিপক্ষে একটা শক্ত যুক্তি দাঁড় হয়ে গেলো যে, একটা বুড়ি মানুষ পড়ে যাচ্ছে তাকে এ আটকায় না, এ জীবনে কী করবে? এর পেছনে বেশি টাকা খরচ করে কী হবে?
কিন্তু আমি যে সেই কাজ করার মতো অবস্থায় ছিলাম না, তা বোঝার দরকার নাই; একটা বিশেষ কারণে একটা কাজ আমি করতে পারিনি, অথচ এটাও এখন এটা আমার দোষ!

আরেকটা ঘটনা, আমি একটা বিসিএস কোচিংয়ের অফিশিয়াল কাজে জয়েন করেছিলাম। সেখানে মাত্র কয়েকদিন ছিলাম। সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও সেখানে টিকে থাকতে পারি নাই। আমার বংশগত সুত্রে পাওয়া উচ্চমাত্রায় গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা ছিল। অফিসটা ছোট হওয়ায় নিজের ডেস্কে ঢুকতে ও বের হতে হলে আরও দুইজনকে উঠতে হতো, বিষয়টা বাসের জানালার পাশে বসা যাত্রীর বের হওয়ার মতো। শেষে আমি একদিন শরীরে গ্যাস আটকে রাখলাম; সন্ধ্যার দিকে আমার শরীর বিগড়ে গেলো ও মনেহলো শরীরের প্রতিটি কোষ বিষাক্ত হয়ে গেছে।
আমার আবার বংশগত সুত্রে পাওয়া আমাশয়ও আছে। কোষ্ঠকাঠিন্যের ঔষুধ খেলে আমাশয় হয়, আমাশয়ের ঔষুধ খেলে আবার কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।
ফলে আমার বডি সাপোর্ট না করায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও চাকরিটাতে টিকতে পানি নাই।
অথচ এই সমস্যাঘটিত বিষয়টাকেও আমার দোষ হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়েছে; আমি নাকি ভণ্ডামি করে চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছি।

অন্যদিকে আমার পূর্বপুরুষদের উপহার দেওয়া হাফ ডজন বংশগত রোগ আমার লাইফের সফলতার পথকে পাখির ডানা বেঁধে রাখার মতো বেঁধে রেখেছে।
মানুষ তার পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে পায় সম্পদ, আশির্বাদ, চাকরির কোটা ইত্যাদি। আর আমি পেয়েছি আমাশয়, গ্যাস্ট্রিক, এলার্জি, চোখের রোগ, হরমোনাল রোগ ও ব্রেইন এর রোগ।
আমার ঢাবিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের চাঞ্চ ফসকে গেছে শর্ট টাইম মেমোরি লসিং ও হ্যালোজিনেশন নামক দুটি বংশগত ব্রেইন রোগের কারণে।
মানুষ সবাই সফলতায় কৃতিত্ব নিতে চায়, কিন্তু কেউ ব্যর্থতার দায় নিতে চায় না। অধিকন্তু মানুষ সবসময় নিজের দোষ ও দায় অন্যের উপর চাপাতে অভ্যস্ত।
এভাবে লাইফের প্রতিটি ঘটনাতেই দেখা যায় আমার কোনো দোষ না থাকলেও সেটাকে আমার দোষ হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়।

২. তোমার ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো উপেক্ষিত হবেঃ ফ্যামিলি যদি সবসময় আত্মীয়স্বজনের উৎসবাদি ও ফর্মালিটি নিয়ে ভাবাছন্ন থাকে। তোমার ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো নজর এড়িয়ে যায় ও উপেক্ষিত হয় তাহলে বুঝবে চূড়ান্ত পর্যায়ে যেটা হবে সেটা হলো একসময় তারা তোমাকে ও তোমার স্বপ্নকে এড়িয়ে যাবে ও জীবনে সফলতা আসতে বিলম্ব হলে তারা তোমাকে সাপোর্ট দেওয়া বন্ধ করে দেবে।

৩. অন্যখানে উদ্ভব হওয়া রাগের প্রভাব তোমার উপর এসে পড়বেঃ যদি দেখতে পাও যে পরিবারের কর্তার এরূপ একটা উদ্ভট স্বভাব আছে তা হলো মাঠে বা অফিসে কোনো বিষয় নিয়ে তার রাগ উৎপন্ন হয়েছে এবং তা সে সেখানে দেখাতে না পেরে তা সেখানে চেপে রেখে বাড়িতে এসে পরিবারের লোকজনদের সাথে অযথাই রাগারাগি করছে তাহলে বুঝে নেবে সেই ফ্যামিলিতে তোমার ভবিষ্যৎ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

৪. তোমার অবর্তমানে তোমার মূল্যবান জিনিসপত্র অযত্নে অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাবেঃ দীর্ঘদিন বাইরে থাকার ফলে যদি দেখতে পাও বাড়িতে তোমার মূল্যবান জিনিসপত্র অযত্নে অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে, তোমার রাখা বইপুস্তক ছুঁচো ইঁদুর-উঁইপোকায় খেয়ে ফেলছে; তাহলে বুঝবে একসময় যখন তোমার সৃজনশীল উদ্যোগ সফলতার খুব কাছে, আরেকটু সাপোর্ট দরকার ঠিক সেই সময়টাতে তোমার সাপোর্ট পাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে।

৫. তোমাকে সন্তানের মতো নয়, নিজ বাড়িতে শরণার্থীর মতো জীবন যাপন করতে হবেঃ তুমি যদি নিজ বাড়িতে সন্তানের মতো বেড়ে উঠার পরিবেশ না পেয়ে শরণার্থীর অবস্থানের মতো পরিবেশ পাও; কোনো হেতু ছাড়াই এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবেনা তাহলে বুঝে নিও তুমি সেই হতভাগা অবহেলিত সৃজনশীলদের দলে।

৬. তোমার দুর্দিনে তুমি একা হয়ে যাবে: কনজারভেটিভ ফ্যামিলিতে তোমার দুঃসময়ে তুমি একা হয়ে যাবে। তোমার লাইফ নিয়ে ভাবার কেউ থাকবে না অর্থাৎ তোমাকে নিয়ে ভাবার সময় কারো থাকবে না; টিভি দেখা, গল্পসল্প করে বেড়ানো, অন্যের ভলান্টিয়ারগিরি করার সময় থাকবে অথচ তোমার লাইফ নিয়ে ভাবার ইচ্ছা কারো থাকবে না।

অতএব, আমরা ডেডিকেটেড ফ্যামিলি ও কনজারভেটিভ ফ্যামিলি এর মধ্যে মোটামুটিভাবে নিম্নোক্ত পার্থক্যগুলো দেখতে পাই—
১. ডেডিকেটেড ফ্যামিলি হলো ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধানকারী আর কনজারভেটিভ ফ্যামিলি হলো দোষ আরোপকারী।

২. ডেডিকেটেড ফ্যামিলি ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান করে সমাধানের উদ্যোগ নেয়, যেমন— আমার এক চাচা তার ছেলে ৬ষ্ঠ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় ৬ বিষয়ে ফেল করে; তাই তিনি এর কারণ অনুসন্ধান করেন এবং বিভিন্নজনের পরামর্শ নিয়ে ছেলেকে একটা আবাসিক কোচিংয়ে ভর্তি করিয়ে দেন ফলে সে ভালো সাপোর্ট পেয়ে এসএসসিতে ৪.৫ এর উপরে রেজাল্ট করে।
অন্যদিকে কনজারভেটিভ ফ্যামিলি ব্যর্থতার জন্য সন্তানকে দোষারোপ করে আর্থিক বরাদ্দ ও অন্যান্য সুবিধা কমিয়ে দেয়। যেমন— আমি ৬ষ্ঠ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় গণিতে এ+ পাই। কিন্তু ৭ম শ্রেণির গণিতে খারাপ করি বলে গণিত প্রাইভেটের বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয় ও তা কমিয়ে দুই মাস করা হয়।

৩. ডেডিকেটেড ফ্যামিলি তার সন্তানের দুর্দিনে তার পাশে দাঁড়ায়, অন্যদিকে কনজারভেটিভ ফ্যামিলি তার সন্তানের দুর্দিনে মীরজাফরের বাহিনীর মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে কিংবা অজুহাত দেখিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যায়; অনেক সময় দেখেও না দেখার ভান করে।

৪. ডেডিকেটেড ফ্যামিলি তার সন্তানের দরকারি জিনিস সরবরাহের জন্য কোনো সম্পদ বিক্রি করে হলেও তা পূরণ করে থাকে আর কনজারভেটিভ ফ্যামিলি প্রথমে সেটা দেবে বলে মিথ্যা আশ্বাস দেয় তারপর দিনের পর দিন যার, মাসের পর মাস যায়, বছরের পর বছর যায় দিবে দিবে বলে সময় পার করে আসলে দেয় না।

৫. ডেডিকেটেড ফ্যামিলি তার সন্তানের লেখাপড়া ও লাইফের উন্নয়নে অর্থ ব্যয় করাকে ইনভেস্ট মনে করে আর কনজারভেটিভ ফ্যামিলি তার সন্তানের এসব ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয় করাকে অনর্থক ব্যয় মনে করে।

৬. ডেডিকেটেড ফ্যামিলি তার সন্তানের জন্য বেশি সময় দেয়, সন্তানের লাইফ নিয়ে চিন্তা ও গবেষণায় মগ্ন থাকে আর কনজারভেটিভ ফ্যামিলি আত্নীয়স্বজন, সমাজ, পাড়া প্রতিবেশি ইত্যাদিতে নিজের ইমেজ ভালো রাখতে সদা তৎপর থাকে ও সেখানে বেশি প্রচেষ্টা ব্যয় করে এবং তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের কর্মকাণ্ড করে বেড়ায়, সন্তানের লাইফ নিয়ে ভাবার সময় তাদের থাকে না।

মোটকথা, ডেডিকেটেড ফ্যামিলির চিন্তাভাবনা হলো "সন্তানের জন্য আমরা" আর কনজারভেটিভ ফ্যামিলির চিন্তাভাবনা হলো "আমাদের প্রয়োজনে সন্তানাদি"; অর্থাৎ, ডেডিকেটেড ফ্যামিলি হলো সন্তানের প্রতি ভলান্টিয়ার মাইন্ডেড আর কনজারভেটিভ ফ্যামিলি হলো ব্যবসায়ীক মাইন্ডেড।

তবে তরুণ প্রজন্মের কাছে একটি আশার কথা হলো বর্তমানকালে প্রায় সব ফ্যামিলিই ডেডিকেটেড ফ্যামিলি; অতি অল্প কিছু কনজারভেটিভ ফ্যামিলিই সমাজে রয়েছে। আর সেসব কনজারভেটিভ ফ্যামিলির সৃজনশীল সন্তানেরা লাইফের সফল ও ফলপ্রসূ পরিকল্পনা করার বিষয় পরামর্শ নিতে অবশ্যই আমাদের Advice Desk এ আসবেন।

Advice Desk এর Personal Advising Program এর অন্যান্য সকল প্রশ্নোত্তরের জন্য প্রশ্নমালায় ফিরে যেতে এখানে—ক্লিক—করো

সুখী হওয়ার প্রত্যয়ে | PAPLD Game

No comments:

Post a Comment